Astrology Journeys

Horoscope reading, Prediction, Palm reading, Numerology, Gem Stone, Mantras, Reiki, Meditation & astrology article,রাশিফল, জন্ম ছক বিশ্লেষণ, রত্ন, মন্ত্র,রেইকি, ধ্যান।

Breaking

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

What is Reiki and what are its benefits?

রেইকি

সুন্দর প্রাণবন্ত জীবনের চাবিকাঠি

What is Reiki and what are its benefits? https://www.astrologyjourneys.com/?m=1
'রেইকি' হলো একটি জাপানী কথা।'রে' ও 'কি'এই দুটি শব্দ দিয়ে়ে তৈরি। জাপানি ভাষায় 'রে'শব্দের মাানে হলো সার্বভৌমিকতা, যার গূঢ় অর্থ হল আধ্যাত্বিিক বুদ্ধিমত্তা এবং 'কি'শব্দের অর্থ হলো জীবন শক্তি বা জৈব শক্তি। এক কথায় সর্বব্যাপী জীবনশক্তি। আরো সহজ ভাষায় বললে বলতে হয় জাপানি আধ্যাত্বিক স্পর্শ চিকিৎসা বিধি

জাপানের এক প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হলো রেইকি। যদিও এর সঙ্গে অর্থাৎ এই পদ্ধতির সঙ্গে কোন দেশ-জাতি-ধর্মের বিশেষ সম্পর্ক নেই। আধ্যাত্মিক ভাবনা, শরীরের জ্ঞান, প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং বিশ্বাস হলো এই পদ্ধতির মূলকথা

এটির আবিষ্কার করেন বহু বছর আগে জাপানের ডা. মিকাও উসুই নামে এক মহাত্মা। যদিও ডা. উসুই নিজেই বলেছেন তিনি এই পদ্ধতির প্রবর্তক নন, পূনঃ আবিষ্কারক। তার কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে প্রাচীনকালে জাপানে এই পদ্ধতি বা আধ্যাত্মিক স্পর্শ চিকিৎসার প্রচলন ছিল। কালের বিবর্তনে তা কিছুকালের জন্য হারিয়ে যায় এবং ডা. উসুই তাকে পুনরায় আবিষ্কার করে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। আর শুধু জাপানেই নয়, এখন সারা পৃথিবীতেও রেইকির প্রচলন হয়েছে। অবশ্য কোথাও কোথাও দেশ অনুসারে এর ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ হয়েছে। যেমন ভারতে প্রাণ, চিনে চীন, মুসলিম দেশে বর্ক, রাশিয়ায় বায়োপ্লাজমা ইত্যাদি। নাম যাই হোক আদতে পদ্ধতি একই।

এই বৌদ্ধ চিকিৎসা পদ্ধতি তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মের 'ঔষধি-বুদ্ধ' নামক উপাচার মার্গের একটি সূত্রের ওপর আধারিত। এটি পারিভাষিক রূপ হিসাবে লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ডা. উসুই একটি প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থে এই সূত্রের উল্লেখ দেখে এর পুনরাবিষ্কার করেন।

তবে একটা কথা অবশ্য এখানে বলা প্রয়োজন তা হলো, রেইকি চিকিৎসা পদ্ধতি স্বরূপ এবং এর মূল ভাবনা বা সিদ্ধান্ত বৌদ্ধ দর্শন বা তার আদর্শের সঙ্গে খুব একটা মেলে না। কারণ বুদ্ধদেব স্বয়ং কোথাও ঈশ্বর বা শিব বা শক্তি ইত্যাদির ব্যাখ্যা করেননি। ঈশ্বরের অস্তিত্বের যাবতীয় প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি ছিলেন চির নীরব। তার বক্তব্য ছিল একটি অসহায় অবলা পাখির শরীরে তীর বিদ্ধ হলে মানুষের প্রথম কর্তব্য হল তৎক্ষণাৎ সেই তীর খুলে তার প্রাণ রক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া।এটা অনেক পরের ভাবনা যে ওই তীর কে নিক্ষেপ করেছে বা কত দূর থেকে তা নিক্ষেপ করেছে।এই ভাবনার মধ্যেই তার বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট।

ডা. উসুই এই পদ্ধতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এমন একটি প্রবল ইচ্ছা শক্তির তরঙ্গ খুঁজে বের করেছেন যা মানুষের হাত ও করতালির মধ্য দিয়ে বিচ্ছুরিত হয়। আর এই বিচ্ছুরণ যে কোন রোগ দূর করতে সক্ষম। এমনকি তিনি একথাও বলেছেন যে এই তরঙ্গ কে রোগী পর্যন্ত সেই রোগীকে স্পর্শ না করে, তার শরীর থেকে 1-4 ইঞ্চি পর্যন্ত ব্যবধান রেখে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

ঠিক এই জায়গাতেই একটা আধ্যাত্মিক ভাবনার বা ঈশ্বরীয় ভাবনার জন্ম হয়েছে। আমাদের দেশেও সিদ্ধ মুনি-ঋষিরা এই পদ্ধতিতে মানুষের রোগ নিরাময় করেছেন, এমনকি দুরস্ত রোগী পর্যন্ত চিকিৎসা করেছেন। আপাতঃদৃষ্টিতে এটাকে ম্যাজিকের মত মনে হতে পারে। বস্তুতঃ এটা হল আধ্যাত্মিক শক্তি

এই তরঙ্গ রোগীর সূক্ষ্ম শরীরের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এর কোন ক্ষতিকারক দিকও নেই। ডা. উসুই দাবি করেছেন,এটি একটি দিব্য শক্তি যা ব্রহ্মাণ্ড থেকে নেমে এসে রেইকি চিকিৎসকের শরীরে প্রবেশ করে এবং বেরিয়ে আসে।

স্বভাবতই বৌদ্ধ ভাবনার সঙ্গে এর তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। বুদ্ধ ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে কখনো স্বীকার করেননি। তাছাড়া এই রেইকি চিকিৎসা, পদ্ধতির পারিভাষিক স্বরূপ 'শিব' ও 'শক্তির' ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অথচ এই শিব বা শক্তির সঙ্গে বৌদ্ধ দর্শনের কোন সম্পর্ক নেই। বরং এর চিহ্ন ও চক্রের সঙ্গে শাক্ত দর্শনের ভৈরবীচক্র ও বৈদিক দর্শনের শ্রী চক্রের সঙ্গে বেশ মিল দেখা যায়। সুতরাং এটা বেশ আস্থার সঙ্গে বলা যায় যে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি 'শক্তিতন্ত্র' বিজ্ঞানের সংগত ও অত্যাশ্চর্য বিধি বা পদ্ধতি গুলোর মধ্যে একটা।

তাছাড়া আরও একটা কথা এখানে ভাবার আছে। শক্তিতন্ত্র বিজ্ঞানের মোটামুটি সমস্ত পদ্ধতি বা বিধিই এধরনের অলৌকিক বা দিব্য রেঞ্জকে লাভ করার বিধি। রেইকির লোগো মার্ক, চিহ্ন, শিব, শক্তি ইত্যাদির বিবরণ এবং এর সূক্ষাতিসূক্ষ শরীরের চক্রের ব্যাখ্যা শক্তি তন্ত্রেরই ব্যাখ্যা। যে ব্যাখ্যার অংশতঃ বিকৃতি এবং অসম্পূর্ণ ভাবনা থেকেই রেইকির ভাবনার জন্ম বলে অনেকে মনে করেন আর তা বহুলাংশে স্বাভাবিকও। বৌদ্ধ সাধুদের কারো কারো মধ্যে গূঢ়-সাধনার প্রতি আকর্ষণ জন্মাবার ফলে তারা শাক্ততন্ত্রের অনেক বিধির প্রতি প্রভাবিত হন এবং গ্রহণ করেন। যদিও তাদের নিজেদের মধ্যে এর প্রামাণিকতা বিষয়ে মত বিরোধ ছিলই। এক পক্ষের বক্তব্য ছিল এটা বৌদ্ধধর্ম ও আদর্শের পরিপন্থী। অপর পক্ষের বক্তব্য ছিল এই মত ও বিধি বৌদ্ধ ধর্মের পরিপন্থী হলেও তার ঔচিত্য বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশেরই সহায়ক।

যতদূর জানা যায় ডা. উসুই এই বিদ্যা অর্জন করেছিলেন কোন বৌদ্ধ সাধকের কাছ থেকে। কিন্তু যেহেতু সাধন মার্গের কোন সাধকের সঙ্গে জাগতিক বা সাংসারিক বিষয়-আশয় এবং প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনের কোন সম্পর্ক থাকে না, অন্যদিকে ডা. উসুই এই বিদ্যাকে কাজে লাগান জাগতিক প্রয়োজনে অর্থাৎ সাংসারিক রোগ নিরাময়ের কাজে। তাই তাকেই এই বিদ্যা বা জ্ঞানের পুরোধা বলে প্রচার করা হতে থাকে।

পরবর্তী সময়ে তৃতীয় প্রজন্মের জনৈকা মহিলা ডা. উসুইয়ের পদ্ধতি ও ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য মৌখিকভাবে প্রচার করেন। এই প্রচারের মধ্যেই যেকোনো কারণেই হোক, কিছু কিছু মিথ্যা ও অবাস্তব ব্যাপার ঢুকে পড়ে। এমনকি ডা. উসুই সম্পর্কেও। মনে করা হয় এক্ষেত্রে মহিলা তার ব্যবসায়িক লাভ ও নিজের ব্যক্তিত্ব উজ্জ্বল করতেই এমনটা করে থাকবেন।

যাইহোক নানা মতভেদ ও বিতর্ক সত্ত্বেও রেইকি চিকিৎসা, এর ক্রিয়াশীলতা এবং প্রভাবের প্রত্যক্ষ রূপ অদ্ভুত এবং আশ্চর্যজনক। একে স্পষ্ট অনুভব করা যায়, এর প্রভাব কে প্রত্যক্ষ করা যায় আর  ডা. উসুইয়ের পদ্ধতিকে খুব সহজে শেখা যায়। তাই স্বভাবতই একে অবৈজ্ঞানিক বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

জীবের জন্ম কাল হইতেই রোগের জন্ম। রোগকে দূর করার ক্ষমতাও তাই জীবের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। জীব স্বয়ং যখন সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে চায় তখন বাইরের উপাচার-তা কোন সনাতন পদ্ধতিরই হোক বা তার বাইরের হোক, ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিই তাকে সুস্থ ও নিরোগ থাকতে সাহায্য করে। আর এটা তো আমরা সকলেই জানি যে রোগী বা জীব স্বয়ং যদি সুস্থ ও নিরোগ হয়ে ওঠার জন্য তার প্রবল ইচ্ছা ও ব্যাকুলতা ব্যক্ত না করে তাহলে জগতের কোন চিকিৎসাই তাকে সারিয়ে তুলতে সক্ষম হবে না। রোগ নিরাময়ে ইচ্ছাশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো আছেই।

এই ব্যাকুলতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি দ্বারা চালিত মানুষ স্বয়ং উপাচারের নানা পদ্ধতির প্রয়োগ করে এসেছেন এবং বিকাশ সাধনে তৎপর হয়েছেন।কিন্তু কালের বিবর্তনে সঙ্গে সঙ্গে জীবনের জটিলতা যেমন যেমন বেড়েছে তেমন তেমন তার উপাচারের জন্যও মানুষ অনুসন্ধিৎসু হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সর্বব্যাপী অব্যক্ত সত্তার অনুভব করে এসেছেন এবং সেই মতো তারা তাদের সুবিধা ও ভাবনার দ্বারা ওই সত্তার নামকরণ করেছেন। এই অব্যক্ত সত্তাকে আরো বেশি অনুভব করার জন্য মানুষ সাধনা করেছেন, পূজা করেছেন, তপস্যা করেছেন। ঈশ্বরের সাধন-ভজন করেছেন। তারা সেই সত্তাকে নিজের মতো আত্মস্থ করার চেষ্টা করেই নিজ নিজ প্রাণশক্তিকে বিকশিত করেছেন। পাশাপাশি সেই শক্তিকে নানা রোগের এবং নানা সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়োজিত করেছেন। প্রাচীনকালের মুনিঋষিরাও এই প্রাণ শক্তিকেই বস্তুতঃপক্ষে বিকশিত করেছেন। এই কাজ মহাত্মা বুদ্ধও করেছেন। এই জীব শক্তিকেই তিনি বিকশিত করে জনকল্যাণের জন্য প্রয়োগ করেছেন এবং একে বিকশিত করার জন্য পথের সন্ধান দিয়ে জনমানসকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আজও তিব্বতের বিভিন্ন বৌদ্ধ মঠে বুদ্ধ কথিত বা প্রবর্তিত এমন কিছু পবিত্র, রহস্যময় এবং গুপ্ত বিধির প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে নানা রোগ ও সমস্যার সঠিক নির্ধারণ সম্ভব হয়। বৌদ্ধ মঠের সন্ন্যাসীরা এবং লামারা সেই রহস্যময় গুপ্ত মন্ত্র ও শৈলীকে জিভ থেকে পায়ের তালুতে চালিত করে মানুষের চিকিৎসা করেন।

রেইকি এমনই সব বিধির একটি অন্যতম বিধি, যে বিধিতে বিভিন্ন রোগের উপাচার এবং জীবনের জটিলতম সমস্যাসমূহের নিদান করা সম্ভব হয়।

রেইকির অর্থ হল সর্বব্যাপী জীব-প্রাণ-শক্তি। এই শক্তির অন্তঃকরণে সমস্ত প্রাণীরই প্রবেশ জন্মের পর থেকে সমান এবং অবাধ। ছোটদের মধ্যে এই জীব-প্রাণ-শক্তি অনেক বেশি তরঙ্গিত হয়। যেমন যেমন সময় যায় তেমন তেমন বিভিন্ন রকমের অবরোধের ফলে এটা কম হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে শরীরের মধ্যে সমতার অভাব ঘটতে থাকে। এই সমতার অভাব থেকে জন্ম হয় নানা ব্যাধির। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শরীরের ভারসাম্যকে বজায় রেখে চলতে পারে না। আর তাই তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তাদের বেঁচে থাকার অর্থ মলিন হয়ে যায়।

বর্তমানের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের বাইরে কিছু ভাবতে চান না বা স্বীকার করেন না। অন্য কোন ধরনের প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক চিকিৎসাকে তারা অবৈজ্ঞানিক বলে অভিহিত করতে চান। শুধু ব্যতিক্রম ঘটেছে এই রেইকি পদ্ধতির ক্ষেত্রে। মানব শরীরের রোগের ওপর এর আশ্চর্য প্রভাব লক্ষ্য করে তারা একে শুধু স্বীকারই করেননি, প্রয়োজন বোধে তারা একে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করতেও শুরু করেছেন। অবশ্য মত থাকলে দ্বিমতও থাকে। তাই কোন কোন চিকিৎসকের এ নিয়ে দ্বিমত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

হিলিং শক্তির মাধ্যমে যে চ্যানেল তৈরি করা হয় তার মধ্য দিয়েই আরোগ্য করানো যায়। এই শক্তির মধ্যে আছে অনেক গূঢ় তত্ত্ব। হিলিং ব্যবস্থার বিভিন্ন শৈলীর একটা হল রেইকি। এই রেইকি যদিও পুরোপুরি মনোবিজ্ঞান নির্ভর। মানব মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলে চিকিৎসা চালাতে হয়। রেইকি প্রশিক্ষকরা তাদের পূর্বসূরী বা গ্র্যান্ড মাস্টারের কাছ থেকে বিশেষ ধরনের শক্তি হস্তান্তর পদ্ধতি শিখে নেন।

রেইকি পদ্ধতির মাধ্যমে যারা চিকিৎসা গ্রহণ করছেন তারা জানেন এটি ব্যবহারে প্রায় মন্ত্রের মতো দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। এর প্রয়োগও করা যায় খুব সহজে

বলাবাহুল্য, রেইকি একটা শক্তি। এই শক্তি জীবদেহের অন্যতম শক্তি হলেও সাধারণভাবে এর প্রয়োগ সম্পর্কে আমরা বিশেষভাবে জ্ঞাত নই। তাই এই শক্তির ব্যবহারিক দিকটির প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার। মনের ইচ্ছা শক্তিকে বৃদ্ধি করে এবং তাকে অপরের দেহে সমাবিষ্ট করে তাকে নীরোগ করে তোলা যায়

এই চিকিৎসায় ইচ্ছাশক্তির উপর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইচ্ছা শক্তি হল বিশ্বজনীন একটি শক্তি। চিকিৎসা করার সময় এই ইচ্ছাশক্তিকে একীভূত করে তাকে রোগীর দেহের মধ্যে সঞ্চারিত করা হয়। বিশ্বজনীন এই শক্তি আমাদের মনুষ্য সমাজের প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে।কিন্তু যেহেতু আমরা তার প্রয়োগ জানিনা তাই খুব স্বাভাবিক কারণেই একে ব্যবহারও করতে পারি না।

মানব সভ্যতার ইতিহাসের একেবারে জন্মলগ্ন থেকেই রোগমুক্তির জন্য জীবনীশক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে। মনের ভিতরের শক্তিকে দৃঢ়বদ্ধ করে মানুষ জয় করত রোগকে। যতদূর জানা যায় প্রথম তিব্বতিরা হাজার হাজার বছর আগে এই ভাবে প্রাকৃতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গভীর ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে রোগকে জয় করত। মানব শরীরকে ঘিরে একটা অতীন্দ্রিয় ঐশী শক্তির পরিবেশ তৈরি করে রোগকে জয় করার উপায়ের কথা ব্যাখ্যা করেছেন। পরে এই পদ্ধতিই ছড়িয়ে পড়ে ভারতে এবং ভারত থেকে কিছু সংশোধন পরিমার্জন হয় তা পরবর্তী সময়ে জাপান, রোম, গ্রীস, চীন ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই পদ্ধতি বেদ-পুরাণের যুগের মত গুরু-শিষ্য পরম্পরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। স্বভাবতই তাই এগুলি লিখিত অবস্থায় না থাকার জন্য এর ব্যাপক প্রয়োগ বা প্রচারের সুযোগ ঘটেনি। বরং ধীরে ধীরে তার লোপ পেতেই থাকে।

পরবর্তী সময়ে পণ্ডিতরা পুরাকালের এই শিক্ষা পদ্ধতির সন্ধান পান তখনকার ভাষা সংকেত ও প্রতীকের মধ্যে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ডা. মিকাও উসুই দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে এই পদ্ধতির পুনরাবিষ্কার করেন।
What is Reiki and what are its benefits? https://www.astrologyjourneys.com/?m=1

অধ্যাপক ড. মিকাও উসুই

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জাপানের (7 ফেব্রুয়ারি 1802 থেকে 11 অক্টোবর, 1883) কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ছিলেন ড. মিকাও উসুই। খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী ড. মিকাও উসুই ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যান্ত ভাবুক, ধার্মিক, আদর্শবান মানুষ। ড. মিকাও উসুই বৌদ্ধ ছিলেন, না খ্রিস্টান, এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। তবে অধিকাংশের অভিমত তিনি প্রথমে বৌদ্ধ ছিলেন এবং পরে খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করে ছাত্র-ছাত্রীদের খ্রিস্ট ধর্ম এবং ধর্মাচরণ নিয়ে ব্যাখ্যা করতেন।

বাইবেল পরবার সময় জনৈক ছাত্র তাকে প্রশ্ন করে বলে যে ব্যক্তিগতভাবে তিনি বাইবেল এবং বাইবেলে বর্ণিত তথ্যাদির বিশ্বাস করেন কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বিশ্বাস করেন।

পরবর্তী প্রশ্ন,'তাহলে বাইবেলে বর্ণিত বিবরণ ও তথ্যাদি আপনি সত্যি বলে মনে করেন?'
ড. মিকাও উসুই একথা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সত্য বলে স্বীকার করে নেন।
'তাহলে আপনি একথাও নিশ্চয়ই সত্য বলে মনে করেন যে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট স্পর্শ চিকিৎসা করতেন অর্থাৎ হাতের স্পর্শ দিয়ে রোগীর রোগ নির্মূল করতেন এবং সেই পদ্ধতিতে রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য তার শিষ্যদের উৎসাহিত করতেন-তাও সত্যি?'
'হ্যাঁ আমি মনে করি তাও সর্বাংশে সত্য। প্রভু খ্রীষ্ট এ ধরনের শক্তি অর্জন করেছিলেন।'
'আপনিও কি পারেন আমাদের এই অদ্ভুত বিদ্যা শেখাতে? যাতে আমরাও দ্রুত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পারি? আমরা আপনার কাছে এ বিদ্যা শিখতে চাই।'
ড. মিকাও উসুই ছিলেন মহাত্মা যীশুর একনিষ্ঠ অনুগামী। স্বভাবতই তার ছাত্রদের তার কাছ থেকে এমন আশা করাটা খুব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হলো ড. মিকাও উসুই এ ব্যাপারে বিশেষ কিছুই জানতেন না। যে জ্ঞান তার নিজের ছিল না, তা তিনি ছাত্রদের শেখান কি করে? কিন্তু যীশুর ওপর তার আস্থা ছিল অগাধ।অর্থাৎ স্পর্শ চিকিৎসার ব্যাপারটাকে তিনি কিছুতেই অলৌকিক বা অযৌক্তিক বলে মানতে পারছিলেন না।
ছাত্রের প্রশ্ন শুনে তিনি স্তম্ভিত হয়ে পড়লেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তিনি তার অজ্ঞানতার কথা স্বীকার করে নিলেন।

এখানে একটা ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় দু'রকম মত পাওয়া যায়। এক পক্ষের বক্তব্য, যে মুহুর্তে তিনি অনুভব করলেন যে সত্য আছে, তাকে খুঁজে বের করতে হবে,সেই মুহূর্তে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইস্তফা দিয়ে এই সত্যান্বেষণে বেরিয়ে পড়লেন।
অপর এক পক্ষের বক্তব্য, তার এই অজ্ঞানতার জন্য অর্থাৎ যা তিনি নিজে পড়ান বা তিনি বিশ্বাস করেন না তিনি ছাত্রদের শেখাতে পারেন না। জাপানের তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী এই অজ্ঞানতার জন্য তিনি ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার অধিকার হারান। কারণ তিনি ছাত্রদের যা-কিছু পড়িয়েছিলেন সে সম্পর্কে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল না।ছাত্রদের যীশুর মত স্পর্শ দ্বারা রোগ নির্মূলের বিদ্যা তিনি শেখাতে অসমর্থ হয়েছিলেন আর তা তার নিজের অজ্ঞতার জন্য।

পরিনাম স্বরূপ ড. মিকাও উসুই পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্যাগপত্র দিয়ে যীশুর সেই অদ্ভুত বিদ্যা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানঅর্জন করতে বেরিয়ে পড়লেন। তার ভেতরে ওই একই প্রশ্ন বারবার অনুরণিত হচ্ছিল-'তাহলে আপনি কি পারেন আমাদের এই বিদ্যা শেখাতে?'

মনে মনে তিনি দৃঢ় নিশ্চয় করে নেন যে ভাবে হোক, যেখান থেকে হোক তিনি এ বিদ্যা অর্জন করবেন।তার মনে হলো এই বিদ্যা মহাত্মা যিশুখ্রিস্টের যখন অধিগত ছিল তখন খ্রিষ্টধর্মের কোন না কোন গ্রন্থে তার বিস্তৃত বিবরণ মিলবেই। সে দিক থেকে আমেরিকা হল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের দেশ। এ বিষয়ে প্রভূত সাহায্য আমেরিকা থেকে পাওয়া যেতে পারে। তিনি আমেরিকা গেলেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্রিস্ট এবং খ্রিস্টধর্মের ওপর যত বই ছিল তা তিনি পড়ে ফেললেন। কিন্তু কোন বইয়ের মধ্যেই তিনি সেই আধ্যাত্মিক শক্তির সন্ধান পেলেন না, যা দিয়ে যীশু রোগীদের নিমেষে রোগমুক্ত করতেন। আমেরিকায় যত পাদরি ও খ্রিস্টধর্মের পন্ডিত ছিলেন একে একে তাদের প্রায় সকলের সঙ্গেই দেখা করলেন। কিন্তু কেউই তাকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারলেন না। তবে একটা জিনিস তার মাথায় এলো খ্রিস্টধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে বহুলাংশে মিল আছে। তাহলে তো ভগবান বুদ্ধ ও তার ধর্মমত সম্পর্কিত গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করে দেখতে হয়। কারণ ভগবান বুদ্ধও রোগীদের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ করে তোলার অদ্ভুত ও অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। এই বিদ্যা বলে তিনি বহু রোগীর রোগ নিরাময় করেছিলেন। এই ভাবনা থেকেই তিনি আবার বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান জাপানেই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। জাপানে এসে তিনি বহু মঠাধিকারী, বৌদ্ধ, ভিক্ষু, বিদ্বান ও দার্শনিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেন।

ইতিমধ্যে ড. উসুইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো তার পরিচিত এক বৌদ্ধ ভিক্ষু ও মঠের অধ্যক্ষের  সঙ্গে। তিনি ড. উসুইকে 'জাপানি কমল সূত্র' পড়ার জন্য তাকে পরামর্শ দিলেন।
বৌদ্ধধর্মাচারীদের বক্তব্য মনের শক্তি বা ইচ্ছাশক্তির উপরই অধিক মনোযোগ দেওয়া উচিত,তাকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য সর্বতোভাবে সচেষ্ট হওয়া উচিত। শারীরিক শক্তি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এভাবে চেষ্টা করতে করতেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো এক জেন মঠে একজন প্রবীণ বৌদ্ধ ধর্মাচার্যের সঙ্গে। তিনিও তার অনুসন্ধিত্সু মনকে আরো উৎসাহিত করলেন এবং তার বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করতে সাহায্য করলেন। বৃদ্ধ ধর্মাচার্য উসুইকে আশ্বস্থ করে বললেন,'যে অদ্ভুত ক্ষমতার প্রয়োগ ভগবান বুদ্ধ করেছেন তা সর্বাংশে সত্য। আর যেহেতু তিনি তা করেছেন সেহেতু তা আজও করা সম্ভব। কেমন করে বা কি করে সেটাই তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। তুমি তা পারবে। ধৈর্য হারিও না। তুমি তোমার অনুসন্ধান চালিয়ে যাও।'

'জাপানি কমল সূত্র' পড়ে উসুই হতাশ হলেন। তার রহস্যের সন্ধান তিনি সেখানেই পেলেন না। পড়লেন চীনের 'কমল সূত্র'। তার থেকেও তিনি তেমন কিছু পেলেন না। তবে একটা জিনিস তার মনে হলো তৎক্ষণাৎ রোগীর রোগ দূর করার অদ্ভুত পদ্ধতির ব্যাপারে তিব্বতের 'কমল সূত্র' থেকে তিনি কিছু সাহায্য পেতে পারেন অথবা তাঁকে উত্তর ভারতের কোন সিদ্ধ মহাযোগীর কাছে যেতে হবে। তারাই তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন। এজন্য সংস্কৃত শেখার প্রয়োজন। সংস্কৃতের জ্ঞান না থাকলে এ বিদ্যার জ্ঞাতার কাছে পৌঁছানো যাবে না, জ্ঞান অর্জন সম্ভব হবে না। তিনি যথাসাধ্য সংস্কৃত শিখলেন এবং শেষমেষ উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন, উদ্দেশ্য কোন মহাযোগীর সন্ধান করা।

এ পর্যন্ত ঠিক আছে।কিন্তু এর পরেই নানা জনের নানা মত বিষয়গুলো কেমন গুলিয়ে গেছে। ফলে কোন সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

কোন কোন পন্ডিতের মতে তিব্বত দেশে এসে উসুই কোন মূল্যবান প্রাচীন পান্ডুলিপি পেয়েছিলেন যার থেকে তিনি লুপ্ত জ্ঞান ও বিদ্যাকে লোকসমক্ষে তুলে আনতে পেরেছিলেন। ওই পাণ্ডুলিপিতে নাকি মহাত্মা যীশুর যাত্রা বিবরণী ও রোগীদের স্পর্শমাত্র সুস্থ করে তোলার বিধি ও সাধনার উল্লেখ ছিল। আবার এমন কিছু পন্ডিত আছেন যারা তথ্য-প্রমাণসহ দেখাতে চান যে উসুই ভারতে এসেছিলেন এবং উত্তর ভারতের হিমালয় গিয়ে কোন সিদ্ধ যোগীর সংস্পর্শে এসে অদ্ভুত রোগ নিবারণ পদ্ধতি শিখে এসেছিলেন। কোন কোন জীবনী লেখক এর মতে এই পদ্ধতি তিনি তিব্বতের 'কমল সূত্র' অধ্যয়ন করে লাভ করেছিলেন।

আসল তথ্য যাইহোক, বাস্তব ঘটনা হলো ড. উসুই অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অদ্ভুত ও দিব্য জ্ঞান লাভ করেছিলেন।তাই এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে তিনি ঠিক কোথা থেকে কিভাবে এই জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

সাধনার এই অদ্ভুত পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পর তিনি স্বভাবতই তৃপ্ত ও আনন্দিত হয়ে ওঠেন। তিনি জেন মঠের সেই ধর্মাচার্যের সঙ্গে আবার গিয়ে দেখা করেন যিনি তাকে এই বিদ্যা অর্জনের জন্য প্রথম উৎসাহিত করে তুলেছিলেন। উসুই ওই মঠের অধ্যক্ষকে সবিস্তারে এ বিষয়ে জ্ঞাত করলেন। উভয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করলেন। এবারে প্রশ্ন উঠল কোথায় গিয়ে তিনি এ নিয়ে সাধনা ও গবেষণা করবেন। উভয়ের দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ড. উসুই জাপানের কিয়াত শহর থেকে 16-17 কিলোমিটার দূরে ক্যুরি ইয়িমা পাহাড়ে গিয়ে নির্জনে বসে সাধনা করবেন। সাধনা করবেন ধ্যান ও উপবাসের মাধ্যমে। ওই মাঠের এক যুবক ভিক্ষুকে এমন অনুরোধও করা হলো যে 27 দিন পর অর্থাৎ 27 তম দিনেও তিনি যদি ফিরে না আসেন তাহলে তার মৃতদেহ বা অস্থি যেন ক্যুরি ইয়ামা পাহাড় থেকে নিয়ে আসা হয়।

ড. উসুই সাধনার জন্য ক্যুরি ইয়ামা পাহাড়ে গিয়ে তার সাধনা শুরু করলেন। তার কাছে সে সময় ঘড়ি ছিল না, কোন ক্যালেন্ডারও ছিল না। দিনের হিসাব রাখার জন্য তিনি একুশটা পাথর কুড়িয়ে নিয়েছিলেন। একটা করে দিন যায় আর তিনি একটা করে পাথর সরিয়ে রাখেন। সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে তিনি তার সাধনায় ডুবে গেলেন। এক এক করে কুড়িটা দিন কেটে গেল।উপবাস ও ক্রমাগত ধ্যানমগ্ন থাকার ফলে তিনি ভীষণ ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়লেন।কিন্তু সিদ্ধিলাভ বলতে যা বোঝায় তা তিনি তখনও অর্জন করতে পারলেন না। ক্রমশ হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে লাগল।

পরের দিন সকালে যথারীতি তিনি পূর্ব দিকে আবার ধ্যানমগ্ন হলেন এবং পরমাত্মার কাছে সঠিক পথ নির্দেশের জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তিনি অনুভব করলেন দূরে একটা শুভ্র আলোর জ্যোতি। রংবেরঙের রামধনু রঙের আলোর বুদবুদ যেন ক্রমশ এগিয়ে আসতে দেখলেন। যেমন যেমন আলোর ঐ ঝলকানি এগিয়ে আসতে লাগল তেমন তেমন তার আকারও বাড়তে লাগল। ড. উসুই কিংকর্তব্যবিমুঢ়ের  মত বসেই রইলেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। তার বেশ ভয়ও হতে লাগলো। একবার ভাবলেন উঠে পালাবেন কিনা। তারপরেই মনে হল এটা অন্যরকম কিছুও তো হতে পারে। হয়তো ওই আলোর দ্যুতি অশুভ নয়, কোন শুভ প্রতীক। হতে পারে তা কোন আধ্যাত্মিক শক্তি বা দিব্য আত্মা যা তার প্রার্থনা শুনে পরমাত্মা কর্তৃক প্রেরিত।

ড. উসুই ভাবলেন  দীর্ঘ সময়ের পর সাধনার শেষ মার্গে তিনি এসে পৌঁছেছেন, এখন তার ভয় পেলে চলবে না। পিছিয়ে পড়লেও চলবে না। আর তার ক্ষতি হলে খুব বেশি তার মৃত্যু হবে। মানুষ মাত্রেরই একদিন মৃত্যু হবে-দুদিন আগে আর দুদিন পরে। মৃত্যুভয়কে তিনি মুহূর্তে জয় করে ফেললেন এবং যা হতে যাচ্ছে তা ধারণ করার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। দিব্য জ্যোতি আস্তে আস্তে নেমে এসে তার আজ্ঞা চক্রে এসে মিলিয়ে গেল। ড. মিকাও উসুই বিদ্যুতের মতো শিহরণ অনুভব করলেন। তার মনে হল তিনি যেন মূর্ছিত হয়ে পড়লেন। তার ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল, আজ তোর সাধনা সম্পূর্ণ হলো। তোর সাধনা ও উপলব্ধিকে তুই জনকল্যাণে নিয়োজিত কর।

তার ক্লান্ত অবসন্ন দেহে যেন প্রাণের একটা জোয়ার বয়ে গেল। তার মনে হল তিনি যেন আকাশে ভর করে ভেসে যাচ্ছেন। একটা নতুন শক্তিতে তিনি তরতাজা হয়ে উঠেছেন। বেশকিছু সময় তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রইলেন। তন্দ্রা যখন কাটলো তখন দুপুর গড়িয়ে এসেছে। তিনি উঠে দাঁড়াবার জন্য চেষ্টা করতেই একটা বিচিত্র স্মৃতি নিজের ভেতর অনুভব করলেন। দীর্ঘ উপবাস এবং সাধনার ধকল নিমেষে কোথায় যেন অপসৃত হয়ে গেছে। এটা তার কাছে প্রথম আশ্চর্য ঘটনা বলে মনে হল। খুশিতে আপ্লুত হয়ে তিনি তরতর করে পাহাড় থেকে নিচে নেমে যেতে লাগলেন। হঠাৎ একটা পাথরে আঘাত লেগে তার পায়ের আঙ্গুল দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার হাত আঘাতপ্রাপ্ত আঙুলে চলে গেল। তিনি হাত দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরলেন। পরমুহুর্তেই আঙ্গুলের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল এবং আঘাতের কষ্ট ও ক্ষত সেরে গেল। ব্যথাও সেরে গেল। এটা তার কাছে দ্বিতীয় আশ্চর্য ঘটনা।

স্বভাবতই এবার তিনি ক্ষুধা অনুভব করলেন। কিছু খাওয়া দরকার। পাহাড় থেকে নেমে এসে তিনি একটি খাবারের দোকানে ঢুকলেন। কিছু খাবারের আদেশ দিলেন। দোকানদার তাকে দেখেই বুঝতে পারলেন তিনি কোন সাধু, পাহাড় থেকে ক্ষুধার্ত হয়ে এসেছেন। তাই তার অভিজ্ঞতা মত ড. উসুইকে শরীরের দিকে খেয়াল রেখে হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু ড. উসুই সে কথা না শুনে তাকে আগের মতোই বেশ কিছু ভারী খাবার দেবার নির্দেশ দিলেন। এর কিছু পরেই খাবারের ট্রে নিয়ে একটা ছোট্ট মেয়ে তার কাছে এসে দাঁড়ালো। ড. উসুই মেয়েটির দিকে তাকালেন, মেয়েটার গাল ফুলেছিল। জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পারলেন,দাঁতের ব্যথার জন্য মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে এবং তার জন্য তার দাঁতের মাড়ি ও গাল ভীষণভাবে ফুলে গেছে। তার বাবা-মা অত্যন্ত দরিদ্র, শহরে তাকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা তাদের নেই। ড. উসুই মেয়েটির গালে হাত রাখলেন এবং কিছু সময় রেখে হাত সরিয়ে নিলেন ‌। দেখা গেল মেয়েটার গালের ফোলা একেবারেই কমে গেছে, কষ্টও নেই। ড. উসুইয়ের কাছে এটা তৃতীয় আশ্চর্য ঘটনা। তিনি এরপর পেট পুরে খাওয়া দাওয়া করলেন। কোন কষ্টই তার হলো না।

কিয়াতো পৌঁছে তার প্রথম কর্তব্য জেন মঠের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করা। ড. উসুই তাই করলেন। মঠাধ্যক্ষ বাতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। ড. উসুই তোর নবলব্ধ জ্ঞান ও পদ্ধতি যোগে তার চিকিৎসা করলেন। চিকিৎসায় তিনি সেরেও উঠলেন। এটি তার কাছে চতুর্থ আশ্চর্য ঘটনা।

পরপর তিন চারটি ঘটনা থেকে ড. উসুই এবং  অন্য সকলেই জেনে গেলেন যে তিনি সত্যিই সেই অদ্ভুত ও দিব্য শক্তি অর্জন করেছেন; যার স্পর্শমাত্র অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়।

এবার তার পরবর্তী কর্মসূচি তৈরি করার পালা। ড. উসুই চাইছিলেন যে জ্ঞান ও শক্তি তিনি অর্জন করেছেন, তাকে দেশের দীন দরিদ্র অসহায় মানুষের সেবায় লাগানো। জেন মঠের অধ্যক্ষের সঙ্গেও কথাবার্তা হল। তিনিও এই একই মত পোষণ করলেন।

ড. উসুই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি দীন-দরিদ্র ভিখারিদের মধ্যে গিয়ে সেবার কাজ করবেন। কোন কোন গ্রন্থে বা কোন কোন বিদ্বান এখানে ড. উসুয়ের ভিক্ষুকের কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন। আমরা জানি বৌদ্ধ সাধুদের ভিক্ষু বলা হয়। এনারা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। আর যাই হোক সে অর্থে তারা অসহায় বা দীন-দরিদ্র নয়। বরং তারাই ঈশ্বরের সাধনা ও দিন দুঃখীর সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং ড. উসুই ভিক্ষুকদের মধ্যে গিয়ে থাকতে পারেন ভিক্ষুদের মধ্যে নয়। ভিক্ষু ও ভিক্ষুক এ দুটি শব্দকে সমার্থক করে ফেলার জন্যই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়। যাইহোক ড. উসুইয়ের মনে হল ভিক্ষুদের মধ্যে সেবার কাজ করতে গেলে তাকে তাদের প্রধানের এর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে হবে। সেইসঙ্গে নিজের জীবনযাত্রা পোশাক-আশাক ইত্যাদিও বদলাতে হবে।

সেই মত তিনি সাধারণ পোশাকে কিছু ফলমূল ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে ভিখারিদের বস্তিতে গেলেন এবং প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাবার জন্য দুজন ভিখারিকে অনুরোধ করলেন। ড. উসুই সেখানে আসার প্রয়োজনের কথাও বললেন। প্রধানের জন্য কিছু উপহার এনেছেন তাও জানালেন। ভিখারি দুজন পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।একজন অপরিচিত লোককে প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়াটা ঠিকও হতে পারে, বেঠিকও হতে পারে। উপহার ফিরে গেলেও প্রধান রাগ করতে পারে, আবার অচেনা একজন লোককে তার কাছে নিয়ে গেলেও সে রাগ করতে পারে। সাত-পাঁচ ভেবে তারা শেষ পর্যন্ত ড. উসুইকে প্রধানের কাছে নিয়ে গেল। ড. উসুই প্রধানকে তার আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন, তিনি যে অসুস্থ রোগগ্রস্ত ভিখারিদের সেবা-শুশ্রুষা করার জন্যই এসেছেন তা জানালেন। শুনে প্রধান খানিকক্ষণ চিন্তা করে ড. উসুইয়ের প্রস্তাব মেনে নিল এবং শর্ত আরোপ করল যে, তার নিজস্ব যা আছে, কাপড়চোপড়, কোমরের মুদ্রার থলি ইত্যাদি তাদের ভান্ডারে জমা রাখতে হবে এবং তারা যা খেতে দেবে তাই খেতে হবে, যা পরতে দেবে তাই পরে থাকতে হবে।
ড. উসুই মেনে নিলেন এবং সেভাবেই ভিখারিদের মধ্যে থেকে তাদের সেবা করতে লাগলেন। তার বিদ্যার প্রয়োগে অসুস্থ রোগীর সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলো। কেটে গেল কয়েকটা বছর। কিন্তু একটা জিনিস দেখে ড. উসুই হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়লেন তা হচ্ছে যাদের তিনি চিকিৎসা করছেন তাদের অনেককেই আবার ওই বস্তিতে ফিরে আসতে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তারা এই বস্তিতে ফিরে আসছে। উত্তরে তারা সকলেই জানালো তারা কেউ তাদের সামাজিক কর্তব্য ও দায়-দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম নয়। তাদের মতে ভিক্ষাবৃত্তি অনেক সহজ। পরিশ্রম করতে হয় না। তাই তাদের এই বৃত্তিই পছন্দ।

একথায় ড. উসুই ভীষণ ভাবে আঘাত পেলেন ও মর্মাহত হয়ে পড়লেন। নিজের ভুলও বুঝতে পারলেন। বুঝতে পারলেন, তিনি যা কিছু করেছেন তা শরীরের শুদ্ধির জন্য, তাদের আত্মার শুদ্ধির জন্য তিনি কিছুই করে উঠতে পারেন নি। তিনি উল্টো কাজ করেছেন, আত্মা শুদ্ধ না করে তিনি তাদের শরীর শরীর শুদ্ধির জন্য সচেষ্ট হয়েছেন।

জেন মঠের অধ্যক্ষকে তিনি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতেন। তার পরামর্শকে ড. উসুই যথেষ্ট মূল্য দিতেন। এক্ষেত্রে তিনি ছুটে গেলেন মঠে। রেইকি প্রয়োগের ব্যাপারে তিনি আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন। তিনি তার নিজের ভুলও স্বীকার করলেন। ভাবলেন রেইকি হল একটা শক্তি আর একটা শক্তির সঙ্গে অন্য একটা শক্তি আদান প্রদান প্রয়োজন। বিনামূল্যে রেইকি প্রদান করা বা শেখানো ভিক্ষাবৃত্তিরই একটা রূপ আর এই প্রবৃত্তি তাকে উৎসাহিত করত। কিন্তু তিনি পরে ভেবে দেখলেন সংসারে কোন জিনিসই খালি হাতে পাওয়া যায় না। পোষাক,খাবার দাবার, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদি সমস্ত কিছু লাভ করতে গেলে বিনিময় কিছু না কিছু দিতেই হয়। জমি থেকে ফসল নিতে গেলে তার যত্ন করতে হয়, জল দিতে হয়। একইভাবে গাছ থেকে ফল নিতে গেলেও তার গোড়াতে জল-সার ইত্যাদি দিতে হয়, নইলে গাছ শুকিয়ে যায়। এসব ভেবেই ড. উসুই ঠিক করলেন বিনা পারিশ্রমিকে  তিনি রেইকি প্রদান করবেন না। বিনিময় কিছু দিতে হলে বস্তু সম্পর্কে গ্রহীতার মনে শ্রদ্ধা জন্মায় বা গুরুত্ব বজায় থাকে, বস্তুকে সম্মান করতে শেখে।

মুনি-ঋষিরা সমাজের জন্য কাজ করতেন একজন সমাজসেবীর মত নয়, আধ্যাত্বিক রূপে সমাজবাসীর আধ্যাত্মিক বিকাশের সাহায্য করতেন, তার পরিবর্তে সমাজ তাকে দিত অন্নবস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী।

রেইকি যে গ্রহণ করবে বা রেইকির সুযোগ যে নেবে, তাকে যে শুধু নগদ অর্থেই পারিশ্রমিক দিতে হবে তার কোনো মানে নেই। অন্যভাবে, অন্য জিনিসের মাধ্যমেও এই পারিশ্রমিক দেওয়া যেতে পারে।

আধুনিক যুগ হলো ব্যস্ততার যুগ। মানুষ তার নিত্য প্রয়োজন মেটাতে তার বৌদ্ধিক ও ভৌতিক ক্ষমতা অনুসারে উপার্জন করেন। স্বভাবতই সে তার সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন। ঠিক তেমনই একজন রেইকি চিকিৎসকেরও সময়ের মূল্য আছে। সেই মূল্যের দাম না দেওয়ার অর্থ চিরদিনের মত ঋণী থেকে যাওয়া। কখনো কখনো রেইকি চিকিৎসকরা কোন অর্থ বা মূল্য নেন না। এটা এক ধরনের অহংকারের দ্যোতক। রেইকি চিকিৎসা বা দীক্ষার সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য শক্তির আদান প্রদান অত্যন্ত আবশ্যক। এতে উভয় পক্ষেরই গুরুত্ব বজায় থাকে এবং একটা আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্কও রয়ে যায়। রেইকির বিকাশ ও সম্মানের জন্য শক্তির আদান-প্রদান বজায় থাকাটা খুব জরুরি। এতে একটা সম্পর্ক তো থাকেই সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং আশাও বল প্রাপ্ত হয়।
এর পরেই ড. উসুই অনেক চিন্তা ভাবনা করে রেইকির পাঁচটি সিদ্ধান্তের কথা চিন্তা করেন।

1 টি মন্তব্য:

  1. Reiki is alleged to aid relaxation, assist in the body's natural healing processes, and develop emotional, mental, and spiritual well-being. It is also said to induce deep relaxation, help people cope with difficulties, relieve emotional stress, and improve overall wellbeing. reiki terapije cena

    উত্তরমুছুন