Astrology Journeys

Horoscope reading, Prediction, Palm reading, Numerology, Gem Stone, Mantras, Reiki, Meditation & astrology article,রাশিফল, জন্ম ছক বিশ্লেষণ, রত্ন, মন্ত্র,রেইকি, ধ্যান।

Breaking

বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

Astrological Benefits of Wearing Pearls|জ্যোতিষ অনুসারে মুক্তা ধারণের প্রয়োজনীয়তা

মুক্তা

Astrological Benefits of Wearing Pearls


মুক্তার বিভিন্ন নাম

  • সংস্কৃত-মুক্তা, মণি, মৌক্তিক, ইন্দ্ররত্ন
  • বাংলা-মুক্তা
  • মারাঠি  ও গুজরাটি- মোতী
  • তেলেগু- মোতিয়ালী
  • ইংরেজি- পার্ল

মুক্তার উৎপত্তি

এই রত্নটি খনিতে পাওয়া যায় না। একটি মূল্যবান পাথরও নয়। কিন্তু মুক্তাকে রত্নের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।

আয়ুর্বেদ এবং সংস্কৃত গ্রন্থে মুক্তার কয়েকটি প্রকারভেদর কথা বলা হয়েছে। শাস্ত্রে যেসব মুক্তার কথা বলা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্লভ। একমাত্র সমুদ্রে ঝিনুকের মধ্যে থেকে সংগ্রহ করা মুক্তাই বেশি প্রচলিত। সমুদ্রে এক প্রকার ঝিনুক দেখা যায়, সেগুলির কারোর রং সাদা আবার কারোর রং সোনালি হয়। এইসব ঝিনুক যখন মুখ খুলে কোন বিশেষ নক্ষত্রে জলে ঘুরে বেড়ায়, তখন যদি বৃষ্টি হয় ও সেই বিশেষ নক্ষত্রটির যোগ হয়, তাহলে সেই জলবিন্দু ওইসব ঝিনুকের মুখের মধ্যে চলে যায়। তারপর সেটি ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে থাকে, পরে বাড়তে বাড়তে পরিপক্ক হয়ে ঝিনুকের লালার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে পরে সুন্দর মুক্তার রূপ ধারণ করে।

বেশিরভাগ মুক্তা লঙ্কা, বাগদাদ, বসরা, অটন প্রভৃতি সমুদ্র, তনাবলী, মাদুরার নিকটবর্তী সমুদ্র ও সমুদ্রের খাড়িতে পাওয়া যায়। বসরায় প্রাপ্ত মুক্তাগুলি গুণগত দিক থেকে সর্বোত্তম বলা যায়। বসরার মুক্তাগুলি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, সাদা রং ও মনমুগ্ধকর হয়ে থাকে।

অটনের নিকটবর্তী সমুদ্রে ও  সমুদ্রের খাড়িতে যেসব মুক্তা পাওয়া যায়, সেগুলি হরিদ্রাভ সাদা হয়। এটিকে খুব মূল্যবান মনে করা হয় না। সাদা রংয়ের এবং সোনালী রঙের উজ্জ্বল ঝিনুকে যদি মুক্তা উৎপন্ন হয়, সেগুলি গুণগত দিক থেকে অত্যন্ত মূল্যবান বলা যায়। এগুলি বেশ উজ্জ্বল এবং সুন্দর হয়। চকচকে, মোটা এবং ভারী মুক্তা সবথেকে গুণসম্পন্ন হয়। এছাড়া অন্য ঝিনুকের মুক্তা দেখতে সুন্দর হয় না এবং গুণগত দৃষ্টিকোণ থেকেও নিকৃষ্ট হয়। নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জ্বল, গোল, চকচকে মোটা মুক্তাই শ্রেষ্ঠ। এইসব মুক্তা মুক্তাভস্ম রূপে ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মুক্তা আংটিতেও ব্যবহার করা হয় এবং নানা প্রকার অলঙ্কারেও ব্যবহার করা হয়।

অসুন্দর, বাঁকা, ময়লা, খরখরে ধারযুক্ত মুক্তা গুণগত দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্ন শ্রেণীর বলা হয়। জহুরী এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞগণ মুক্তা দেখে, পরীক্ষা করে, ওজন দেখে মূল্য নির্ধারণ করেন।

সিলোন অর্থাৎ শ্রীলঙ্কায় প্রাপ্ত মুক্তা দেখতে অত্যন্ত সুন্দর হয়। বসরার মুক্তায় একটু কালো অভা হয়, ওজনেও হালকা হয়। মেক্সিকোর সমুদ্রে প্রাপ্ত মুক্তা হয় কালো। একে কালো মুক্তা বলা হয়। বাংলার সমুদ্রের খাড়িতে প্রাপ্ত মুক্তার রং গোলাপি হয়। মাদ্রাজের নিকটবর্তী সমূদ্রের এবং অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রেও মুক্তা পাওয়া যায়।
এই হলো মুক্তার মোটামুটি জন্মবৃত্তান্ত। এছাড়া প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে আরো কয়েক প্রকার মুক্তার উল্লেখ দেখা যায়। এইসব মুক্তার গুন এবং উপকারিতার কথাও জানা যায় ওই সব গ্রন্থ হইতে। এইসব মুক্তা গুলির সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।
Astrological Benefits of Wearing Pearls
  1. শঙ্খ মুক্তা - শঙ্খ সমুদ্রে জন্মায়। এইসব শঙ্খের মধ্যেও কখনো কখনো খুব সাদা রঙের সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল, পায়রার ডিমের মতো ডিম্বাকার মুক্তা জন্মায়। এই সব মুক্তা খুবই দুষ্প্রাপ্য এবং ভাগ্যের জোরে পাওয়া যায়। গুণগত দিক থেকে এর তুলনা করা যায় না। এই মুক্তা ধারণের মানুষ ধনবান হয়।
  2. গজমুক্তা - ভয়ানক গহন অরণ্যে বৃহদাকার নর হাতি দের মধ্যে কারোর মাথার ভেতর কখনো কখনো লাল বা হলুদ রঙের মুক্তা হয়। এই মুক্তা খুবই দুর্লভ। ভাগ্য বলে কেউ কেউ পেয়ে যেতে পারেন। স্ত্রীলোকেরা এটি ব্যবহার করেন, কিন্তু এটিকে খুব মূল্যবান বলে মনে করা হয় না।
  3. বরাহ  মুক্তা - গভীর অরণ্য মধ্যে বিচরণশীল একপ্রকার দাঁতালো নর জঙ্গী শুকরকে বরাহ বলা হয়। এরা অরণ্য মধ্যে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করে। এদের চোয়ালের মধ্যে এই মুক্তা জন্মায়। এটিও খুব দুষ্প্রাপ্য। এর কিছু কিছু গুণ আছে।
  4. বংশ মুক্তা - পাহাড়ে বাঁশগাছের মধ্যে বড় বড় বাঁশে অনেক সময় কোন বাঁশের মধ্যে বেশ বড় আকৃতির উজ্জ্বল জংলি কুলের আকৃতির মুক্তা কখনো কখনো জন্মায়। গুণগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি খুবই উপকারী। সৌভাগ্যক্রমে এই মুক্তা ধারণ করলে বা পাওয়া গেলে, দীনদুখী ব্যক্তিও ধনবান হয়।
  5. ভেক মুক্তা - প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে আছে যে, বর্ষাকালে যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এবং বৃষ্টিপাত হয়, সেই সময় ব্যাঙ ডাকে। দৈবক্রমে যদি সেই বর্ষার জলবিন্দু মাটিতে পড়ার আগে ব্যাঙের পেটে যায়, তাহলে সেই ব্যাঙের পেটে মুক্তা জন্মায়। এই মুক্তা মানুষের দুষ্প্রাপ্য। এই মুক্তা সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল এবং বিদ্যুতের মতো তীব্র গুন প্রকট করে। অত্যন্ত ভাগ্যশালী ব্যক্তি ছাড়া এই মুক্তা পায় না। 
  6. মৎস্য মুক্তা - সমুদ্রের মধ্যে এক বিশেষ প্রকার মাছের পেটে এই মুক্তা জন্মায়। এই মুক্তা দেখতে খুব সুন্দর সবুজাভ রংয়ের হয়। এটিও অত্যান্ত দুষ্প্রাপ্য মুক্তা। এই মুক্তা যে ধারণ করে তার ভাগ্য ফিরে যায়। কথিত আছে, এই মুক্তা মুখের মধ্যে রেখে সমুদ্র বা নদীতে ডুব দিলে জলের ভেতর কোথায় কি আছে দেখতে পাওয়া যায়।
  7. নাগ মুক্তা - একে নাগমণিও বলা হয়। ভারতীয় তন্ত্রশাস্ত্র অনুসারে, সাপের  বয়স একশত বছর হয়ে যায় বা তারও বেশি হয়, তখন তার মধ্যে এমন একটা শক্তি জন্মে যে, সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এই অবস্থায় সেই সাপের মাথায় একপ্রকার মুক্তা জন্মায়, যাকেই নাগমণি বলা হয়। এই বস্তুটির অপূর্ব শক্তি। একে সাপ তার অন্ধকার গর্তে মুখ থেকে বার করে এদিক ওদিক ঘোরে। এই নাগমণি তীব্র আলোক বিতরণ করে। এটি খুবই দুষ্প্রাপ্য।
  8. চিন্তামণি মুক্তা - বর্ষার সময় আকাশ থেকে যে বারিবিন্দু পতিত হয়, সেই বারিবিন্দু বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক প্রভাবে শুষ্ক হয়ে মুক্তা হয়ে যায়। এটি হয় গোলাকৃতি এবং কোনোটা হয় শশার মত। এর মধ্যে একটা নীল রশ্মি দেখা যায়। জ্যোতিষীরা এই মুক্তাকে রুপার আংটি তে ধারণ করতে বলেছেন। এই মুক্তা ধারণ করলে ধারণকারী রাজতুল্য হয়।
  9. রোড়া মুক্তা - হিমালয়ের পাহাড়ে অবস্থিত মানস সরোবরে যখন বরফের টুকরো পড়তে থাকে, তখন তারই কোনও টুকরো থেকে এই মুক্তা জন্মায়। এই মুক্তাও গুণগত দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই উপকারী। আধ্যাত্মিক দিক থেকে এর গুনের তুলনা করা যায় না।

ইতিহাস প্রসিদ্ধ কয়েকটি মুক্তা

  • বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফারসের খাড়িতে 90 রতি পরিমাণ একটি মুক্তা পাওয়া গিয়েছিল। এই মুক্তাটিকে অস্ট্রেলিয়াতে তিন হাজার পাউন্ডে বিক্রি করা হয়েছিল।
  • বিশ্বের সবথেকে বড় মুক্তাটির পরিমাণ 2 ইঞ্চি লম্বা, (3+1/4) ইঞ্চি মোটা এবং এর পরিধি (4+1/2) ইঞ্চি। এই মুক্তাটির ওজন 454 ক্যারেট। এর মূল্য 12 হাজার পাউন্ডের চেয়েও বেশি।

মুক্তার প্রকারভেদ

Astrological Benefits of Wearing Pearls
  1. সাদা রংয়ের মসৃণ ও উজ্জ্বল মুক্তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। দুধের মত সাদা ও উজ্জ্বল মুক্তাকে সকলেই শ্রেষ্ঠ মনে করেন, এর গুণগত ক্ষমতাও অন্য মুক্তার চেয়ে অনেক বেশি।
  2. গোলাপি আভাযুক্ত অথবা গোলাপি রঙের মুক্তাকে শাস্ত্রে ক্ষত্রিয় জাতির মুক্তা বলা হয়েছে। এটি দ্বিতীয় শ্রেণীর মুক্তা।
  3. হরিদ্রাভ আভাযুক্ত মুক্তাকে বৈশ্য জাতীয় মুক্তা বা তৃতীয় শ্রেণীর মুক্তা বলা হয়েছে।
  4. কালো রংয়ের মুখটাকে শূদ্র জাতীয় মুক্তা বলা হয়েছে। এটি নিকৃষ্ট শ্রেণীর মুক্তা।

আসল মুক্তা চেনার উপায়

বৈদ্যগণ এবং হেতিমগণ প্রাচীনকাল থেকেই এই মুক্তা  ঔষধ রূপে অর্থাৎ মুক্তাভস্মরূপে ব্যবহার করে আসছেন।
প্রাচীনকালে মুক্তা চেনার উপায় সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে এখানে তার বিবরণ দেওয়া হল।
1 ) মাটির হাঁড়িতে এক সের গরুর মুত্র ঢেলে 1 ছটাক সম্বর নুন তাতে মিশিয়ে আগুনে বসান। এবার মুক্তাগুলিকে কাপড়ে ঢিলা করে বেঁধে সেই গোমূত্রে এমনভাবে ঝুলিয়ে দিতে হবে, যেন মুক্তাগুলি তলায় না ঠেকে। 6 ঘণ্টা পর্যন্ত এইভাবে রেখে মুক্তা পুটলি থেকে বার করে তুষের সাহায্যে ঘষে শুষ্ক করে নিতে হবে। যদি মুক্তা আসল এবং শুদ্ধ হয় ও উত্তম প্রকারের হয়, তাহলে তার রং, রূপ, উজ্জ্বলতা প্রকৃতিতে কোন প্রকার প্রভেদ হবে না। 
এই প্রকার উত্তম মুক্তাতেই মুক্তাভস্ম তৈরি করা যায়। এই মুক্তা ধারণের খুবই উপকার হয়।
1 ) যদি মুক্তাকে পাতি লেবুর রসে ভিজিয়ে রাখা যায়, তাহলে মুক্তা নরম হয়ে যায়। আজকাল কাচের দ্বারা তৈরি কৃত্রিম মুক্তাও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এইসব কৃত্রিম মুক্তাকে যদি পেশাই করা যায়, তাহলেই বুঝতে পারা যায় যে, এটি নকল মুক্তা। কাচের তৈরি মুক্তাকে পেষন করলে কাঁচের মতই কর্কশ শব্দ হয়। যেসব মুক্তার মধ্যে লাল অথবা হলদে আভা দেখা যায়, সেই সব মুক্তা শ্রেষ্ঠ বলে জানতে হবে। যেসব মুক্তার উজ্জ্বলতা নেই সেইসব মুক্তার কোন কাজ হয় না। উজ্জ্বল, গোলাকার, পরিষ্কার, মসৃণ, মোলায়েম এবং ভারী মুক্তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে জানতে হবে। কিন্তু যদি অমসৃণ, শক্ত, ছোট সাইজের দাগযুক্ত মুক্তা হয়, তাকে নিকৃষ্ট বলে জানতে হবে। এই মুক্তাদ্বারা কোন কাজই হয় না ।
যেসব মুক্তায় জোড় বা চেরা দাগ থাকে, যাতে গাঁঠের  মত থাকে, অনুজ্জ্বল, শুষ্ক ও বিন্দুর মত দাগ থাকে কিংবা কাল বা তামার মত বর্ণ হয়, সেইসব মুক্তা নিকৃষ্ট বলে জানতে হবে।

আসল ও নকল মুক্তার প্রকারভেদ

  1. ধানের ভুষি দ্বারা মুক্তাকে ঘষলে যদি তার উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়, সেটি আসল বলে জানতে হবে। কিন্তু যদি নকল হয়,তাকে ধানের ভুষি দ্বারা ঘষলে তার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।
  2. আসল মুক্তাকে 24 ঘন্টা গোমূত্রের ডুবিয়ে রাখলে বিবর্ণ হয় না, একই রকম থাকে। কিন্তু নকল হলে উজ্জ্বলতা কমে যায়, আবার অনেক সময় তাতে চির ধরে যায়।
  3. পাতি লেবুর রসে আসল মুক্তাকে কয়েক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখলে নরম হয়ে যায়। কিন্তু নকল মুক্তা হলে সেটি নরম হবে না, একই প্রকার থাকবে।
  4. যেসব মুক্তা নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল দেখায়, মোটা, মসৃণ, গোলাকার এবং চাঁদের মত সাদা হয় ও ওজনে ভারী হয়, সেই মুক্তা উৎকৃষ্ট বলে জানতে হবে। এইসব মুক্তা ধারণের এবং মুক্তা ভস্ম রূপে ঔষধে ব্যবহার করলে খুব সুফল প্রদান করে।
  5. যেসব মুক্তা অনুজ্জ্বল, ফিকে রঙের, বাঁকাচোরা, অসুন্দর, গর্ত যুক্ত, শুষ্ক, উঁচু-নিচু ও মাছের চোখের মত দেখতে, সেইসব মুক্তা নিকৃষ্ট বলে জানতে হবে। এই মুক্তা ধারণের বা মুক্তা ভস্ম রূপে ঔষধে ব্যবহার করলে সুফলের পরিবর্তে কুফল হয়।

মুক্তা ধারণের সাবধানতা

  • যদি মুক্তার হার তৈরি করে গলায় ধারণ করা যায় তাহলে দেহের ঘাম রেগে মুক্তা ময়লা হয়ে যায়। তার বর্ণের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে বিশ্রী দেখায়।
  • গরম জায়গায় বা তুলোয়  জড়িয়ে রাখলে মুক্তার ওপর রেখার মতো দাগ বা চির দাগ পড়ে যায়।
  • ভিজে স্থানে মুক্তা রাখলে তার রঙ ঠিক থাকে না বা বিবর্ণ হয়ে যায়, উজ্জ্বলতা থাকে না।

মুক্তা পরিষ্কার করার নিয়ম

  1. রিঠে ফল কিনে এনে তার বিচি বের করে কয়েক ঘন্টা রিঠেফল গুলি জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এমনভাবে ঘাটুন যাতে ফেনা হয়। এই ফেনাতে মুক্তাকে ডুবিয়ে ধুয়ে নিলেই মুক্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। মুক্তার কোন ক্ষতি হবে না।
  2. একটা বড় মূলো নিয়ে বড় বড় করে কেটে, তারমধ্যে মুক্তা ভরে দিন এবং আর একটি টুকরো দিয়ে বন্ধ করে দিন, তারপর একটু ঘষে নিলেই উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। নতুনের মত দেখাবে এবং মুক্তার কোন ক্ষতিও হবে না।
  3. বর্তমানে পুরানো মুক্তাকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সলিউশান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়।কিন্তু একটু অসাবধান হলেই মুক্তার উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  4. পাতি লেবুর রসে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে নিয়ে, তারপর একটু ঘষে নিলেই মুক্তার ময়লা দূর হয়। নতুনের মত মুক্তা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।তাছাড়া পাতি লেবুর রসে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে নিলে মুক্তা নরম হয়ে যায়, তখন সহজেই মুক্তাকে পেষন করে নেওয়া যায়।

নকল মুক্তা

প্রসঙ্গত পূর্বেই বলা হয়েছে, যখন বর্ষা হয়, তখন বর্ষার জল বিন্দু কোনও বিশেষ মুহূর্তে জ্যোৎস্না রাত্রে ঝিনুকের মুখের মধ্যে যদি চলে যায়, তাহলে ঝিনুকের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তার আকার ধারণ করে নেয়।
বর্তমানে ঝিনুকের মধ্যে নকল মুক্তা তৈরি হচ্ছে।কিন্তু এই মুক্তার উপরের তল আসল মুক্তার অপেক্ষা অত্যন্ত কর্কষ ও কঠোর হয়। তাছাড়া বর্তমানে কাচ থেকেও মুক্তা তৈরি হচ্ছে। এই মুক্তা আসল মুক্তার চেয়ে বেশি ভারী হয়ে থাকে। ঝিনুকে ইনজেকশন দিয়েও মুক্তা তৈরি হচ্ছে, এই মুক্তাকে 'কালচার' মুক্তা বলা হয়। এটি আসল মুক্তার চেয়ে কম সুফল প্রদান করে থাকে। কাচের  দ্বারা তৈরি মুক্তা কোন কাজেই লাগে না। এই কারণেই মুক্তা কেনার সময় কোন বিশ্বস্ত জুয়েলারি দোকান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে তবেই কিনবেন।

মুক্তার গুণাবলী, প্রয়োগবিধি ও মুক্তার দ্বারা বিভিন্ন রোগ নিরাময়

রোগ নিরাময়ে মুক্তার ভূমিকা : মুক্তা সাধারণত ঠাণ্ডা এবং এ থেকে ঠান্ডা রশ্মি নির্গত হয়। পিত্ত, রৌদ্র ও সূর্যের গরম রশ্মির আধিক্য থেকে উৎপন্ন যেসব রোগ হয়, মুক্তার সাহায্যে সেই সব রোগ দূর হয়।রক্ত সংক্রান্ত  রোগ হলে চাঁদের কিরণ এবং মুক্তার কিরণ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

যদি রোগীর মধ্যে গরমের আধিক্য হয়, গরম ঔষধ ও গরম খাদ্য খেয়ে কষ্ট বেড়ে যায়, তাহলে মুক্তা থেকে নির্গত ঠান্ডা রশ্মি রোগীর অত্যান্ত উপকার করে। মুক্তা মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রিত করতে অত্যন্ত শক্তিশালী।

রোগীর জন্ম কুণ্ডলীতে যদি চন্দ্র দুর্বল হয় এবং চন্দ্রের কুদৃষ্টি থাকে তাহলে তার মাথার গোলমাল দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে মুক্তার দ্বারা তৈরি ঔষধ মুক্তাভস্ম খাওয়ালে এবং মুক্ত ধারন করলে রোগ দূর হয়।

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে মুক্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ রত্ন। সেই কারণেই হাজার হাজার বছর ধরে মুক্তা ধারণ করে আসছে মানুষ। মুক্তার সঙ্গে চন্দ্রের বিশেষ সম্বন্ধ আছে। কর্কট রাশি যাদের, তারা উপযুক্ত বিচার করে মুক্তা ধারন করলে খুবই সুফল পায়। মুক্তা মানুষের সাংসারিক চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রিত করে। মুক্তাকে সুন্দরতা, পবিত্রতা, পাপহীনতা ও শান্তির প্রতীক মনে করা হয়।

বৈদ্যগন মুক্তাকে বিভিন্ন রোগ আরোগ্য করার জন্য মুক্তাভস্ম রূপে প্রয়োগ করেন। মুক্তাকে হৃদয়, দেহ, পুরুষত্ব শক্তি, স্বাস্থ্য প্রভৃতির ঔষধরূপে ব্যবহার করা হয়। এইসব রোগে মুক্তারভস্ম প্রয়োগ করা হয়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে মুক্তা ঠান্ডা- হৃদয়, যকৃত প্রভৃতিকে শক্তিশালী করে তোলে। পুরুষত্ব, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ঠিক রাখে। রক্ত, পিত্ত, অতিসার প্রভৃতিতে বিশেষ ফল প্রদান করে। রক্ত বন্ধ করতে এবং মুখ থেকে রক্ত বের হলে মুক্তা উপকার করে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে, ক্ষয় রোগে, জ্বরে, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতায়, অতিসার, হাঁপানি এবং অন্যান্য রোগের প্রভূত উপকার করে। যেসব ব্যক্তির হৃদয় দুর্বল, বুক ধড়ফর করে তাদের মুক্ত ধারণ করা উচিত।

লিউকোরিয়া অর্থাৎ প্রদর রোগেও মুক্তা উপকার করে। যেসব মানুষ সমুদ্রে কাজ করেন, যদি সে আংটিতে মুক্তা ধারণ করে, তাহলে তার সমুদ্রে ডোবার ভয় অনেকাংশে কমে যায়। এর প্রভাবে ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক জন্তু ধারণকারী কাছে আসে না।

আয়ুর্বেদে মুক্তাকে মধুর, শীতল, চক্ষু রোগীর সাহায্যকারক বলা হয়েছে। এতে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। বিষের প্রভাব নাশ করে। কাশি ও ক্ষয়রোগ দূর করে। এতে বীর্য দোষ দূর হয়।  পুরুষত্ব, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা নাশ করে। বাত, পিত্ত রোগ দূর করে। অজীর্ণ, শরীরে জ্বালা রোগ নিবারণ করে। মুক্তার হার পরলে দেহের জ্বালা ও গরমের আধিক্য দূর হয়। যাদের চন্দ্র দুর্বল, তাদের মুক্তা ধারণ কর্তব্য।

মুক্তা মধুমেহ, গোদ, মূত্রাশয়ের রোগ, প্রসাবের জ্বালা যন্ত্রণা, জন্ডিস রোগ তথা কুসংসর্গে পড়া, ভ্রষ্টাচার, অধিক মদ্যপান প্রভৃতি কুঅভ্যাস দূর করে।
* মুক্তাভস্ম কোন অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদাচার্যের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত, অন্যথায় ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।

মুক্তা ধারণের নির্দেশ

যেসব ব্যক্তির জন্ম কুণ্ডলীতে চন্দ্রের কুদৃষ্টি দেখা যায় বা চন্দ্র দুর্বল হয় অথবা উপরিউক্ত রোগসমূহের কোন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তার সোমবার সন্ধ্যার সময় চাঁদ উঠলে মুক্তা কন্ঠে বা হাতে বেঁধে রাখবেন বা সোনার আংটিতে বসিয়ে ধারণ করবেন। মুক্তা নিজের ইচ্ছা অনুসারে ধারণ করা উচিত নয়। কোন অভিজ্ঞ জ্যোতিষী দ্বারা জন্ম কুণ্ডলী বিচার করিয়ে তবেই মুক্তা ধারণ করা উচিৎ।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন