মানব জীবনে রাহুর ভূমিকা
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে রাহুর চোখ, মুখ, জিভ, নাক, কান আছে অথচ দেহ নেই। কি অদ্ভুত অবস্থা? সম্পূর্ণ দেহ না থাকার জন্য কোনো ভোগেই সে পূর্ণ তৃপ্তি পান না। রাহুর কামনার কোন শেষ নেই। রাহু অসুর, ভোগবাসনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে তো থাকবেই। আর সেটা তো রাহুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।তারমধ্যে ভোগ করবার প্রচন্ড ইচ্ছা ও বাসনা আছে কিন্তু তার দেহ নেই বলে তার প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি কিছুতেই হয় না। এক ধরনের জ্বালা, কষ্টে তিনি সর্বদা ভোগেন। সেই কারণেই রাহুর ক্ষিধে বেড়ে গেলে তার মনের প্রবল কামনা ও বাসনাকে মেটাবার জন্য সত্যনিষ্ঠ পথকে বিসর্জন দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন চন্ডাল। রাহুর চলার পথ সর্বদাই বক্র, তিনি সরল পথ কি তা জানেনই না। শুক্রকে আমরা দৈত্য গুরু বলে থাকি। কিন্তু রাহু ও শুক্রের মধ্যে রয়েছে বিরাট বড় পার্থক্য। কি এই পার্থক্য? শুক্রের কামনা-বাসনার মধ্যে রয়েছে কোমলতা, স্নিগ্ধতা। শুক্রের মধ্যে যে মায়া-মমতা আছে তা অপূর্ব, অসাধারণ। কিন্তু রাহুর চরিত্র ঠিক শুক্রের বিপরীত। রাহুর কামনা-বাসনার মধ্যে রয়েছে এক উন্মত্ত ভাব, এক্ষুনি তার বহু কিছু চাই। কিন্তু সেই চাওয়ার মধ্যে স্নিগ্ধতা নেই, রয়েছে রুক্ষতা। রাহু ও শুক্রের মধ্যে যৌনজীবনে প্রবল প্রভাব রয়েছে। শুক্রের মধ্যে রয়েছে শুচিস্নিগ্ধ কোমলতা। আর রাহুল মধ্যে আছে অসম্ভব রকমের উন্মত্ত ভাব। অমার্জিত ভাব রাহুর মধ্যে অতিরিক্ত থাকে। রাহু প্রভাবিত ব্যক্তি অপরকে মিথ্যা কথা বাড়িয়ে বলে আনন্দ পায়। দুর্নীতি করতে রাহুল জুড়ি মেলা ভার।কিন্তু এই রাহু যদি কারো জন্ম ছকে শুভ বলবান হন তাহলে রাজঐশ্বর্য দিতে পারেন।
কিভাবে জানা সম্ভব যে জন্মকালীন রাহু শুভ?
অনেকের মতে রাহুর নিজস্ব ঘর কন্যা। রাহুর উচ্চ স্থান মিথুনের ২০° পর্যন্ত, আবার অনেকের মতে বৃষের ২০°পর্যন্ত। অনেকের মতে বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ ও কন্যায় রাহু শুভফল দাতা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এগুলোর কোনটাই সত্য নয়। যেহেতু রাহু কোন গ্রহ নয়, সেই জন্য তার নিজস্ব ঘর বা উচ্চ স্থান হতে পারে না। যদি হোত তাহলে উপরিউক্ত ঘরে রাহু থাকলে রাহুর মহাদশায় মানুষ সর্বস্বান্ত হোত না। আমার ব্যক্তিগত মত অনুসারে রাহু লগ্নের তৃতীয়, ষষ্ঠ এবং একাদশে শুভ ফল দিতে তখনই পারেন যদি তিনি শুভ নক্ষত্রে থাকেন। রাহু যার ঘরে আছেন তিনি যদি বলবান হন তাহলে রাহু প্রকৃতপক্ষে শুভফল দান করতে পারেন। রাহুর মিত্র বুধ, শুক্র, শনি ও কেতু এবং রাহুর শত্রু রবি, চন্দ্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি। অনেক সময় রাহু বৃষ, কর্কট, সিংহ,কন্যা ও তুলায় শুভ ফল দিতে পারেন। সেখানে বিচার করলে দেখা যাবে রাহু নিঃসন্দেহে শুভ নক্ষত্রে রয়েছেন এবং রাহু যার ঘরে আছেন তিনি বলবান। রাহু যদি শুক্রের নক্ষত্রে থাকেন এবং শুক্র যদি জন্মকালীন বলশালী হন এবং বিংশোত্তরী মতে শুক্র বা রাহুর দশা 42 বছরের পরে এলে এদের দশায় মানুষ যা চাইছেন তার থেকে অনেক বেশি কিছু পেতে পারেন।
অনেক সময় প্রায়ই আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখতে পাই হাতে কোনো টাকা নেই, অথচ একটা মোটা বিল দিতে হবে শিগগিরই। সেই সময় হঠাৎ টাকা এসে গেল অতর্কিতে। এটা রাহুর কাজ। যাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাদের জন্মছকে অবশ্যই রাহু হয় পঞ্চম, ষষ্ঠ ও একাদশের সাথে সম্পর্ক করে বসে আছেন অথবা তিনি যে ঘরে অবস্থান করছেন তার অধিপতি গ্রহ বলবান ও শুভ কিংবা একাদশপতির নক্ষত্রে আছেন। জাগতিক ব্যাপারে রাহুর ক্ষমতা বা প্রভাব আমাদের জীবনে খুব বেশি। তাই তার দশা 18 বছর। রাহু যাদের জন্মছকে শীঘ্রগামী গ্রহদের আওতায় থাকেন তাদের প্রতি দেড় বছর অন্তর একটা পরিবর্তন আসে। আর 18 বছর অন্তর একটা বৃহত্তম পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেন। জীবনের পথটাই পরিবর্তিত হয়ে যায় রাহুর দশায়। রাহু যদি বুধ ও শুক্রের সাথে সম্পর্ক করেন এবং শনির দৃষ্টি না থাকে, তাহলে 25/26 থেকে 36/37 এর মধ্যে বিশেষ শুভফল পাবেন।কিন্তু রাহু যদি বৃহস্পতির ঘরে থেকে শুভ নক্ষত্র পেয়ে শনির দৃষ্টিতে থাকেন তাহলে রাহুর শুভ ফল দেওয়ার ক্ষমতা আসবে 45 থেকে 60 বছরে।
রাহু যদি জন্মকালীন প্রকৃত অর্থে বলবান ও শুভ হন তাহলে অন্যান্য কারণে অভাব যদি আসেও শুভ রাহু সেই অভাব রাখে না।
রাহু যদি জন্মকালীন প্রকৃত অর্থে বলবান ও শুভ হন তাহলে অন্যান্য কারণে অভাব যদি আসেও শুভ রাহু সেই অভাব রাখে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন