ধ্যান
মূর্তি ও প্রতীক ধ্যান:
মূর্তি বা প্রতীক ধ্যানের সহজ ও বহু প্রচলিত অবলম্বন। সাধারণত মূর্তি বা প্রতীকের সাহায্যেই অধিকাংশ মানুষ ধ্যান করে থাকেন।
মূর্তি ভাবের উদ্দীপনা ঘটাতে সাহায্য করে। মূর্তি ধ্যানীর ভিতর ভাব-যোগে পরমেশ্বরের সঙ্গে যোগ সেতু রচনা করে। মূর্তি বা প্রতীক স্টার্টারের মত কাজ করে।যেমন স্টার্টারের সাহায্যে মেশিনকে চালু করার পর মেশিন নিজেই চলতে থাকে, ধ্যানের ক্ষেত্রেও স্টার্টার না হলে ঠিকমত ধ্যান শুরু করা যায় না। ধ্যানীর ধ্যান শক্তি জেগে ওঠে এই মূর্তি বা প্রতীকের উদ্দীপনাতে।সমুদ্রে বড় জাহাজে উঠার সময় প্রথমে ছোট জাহাজে উঠে তাতে চেপে বড় জাহাজের কাছে পৌঁছাতে হয়; ছোট জাহাজ হল বিরাট যাত্রাপথের মূর্তি বা প্রতীক।
যিনি সর্বব্যাপী তাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আগে পাওয়ার চেষ্টা চালাতে হয়। তাই মূর্তি বা প্রতীকের উপাসনা। মূর্তি বা প্রতীক নিঃসন্দেহে জড়। কিন্তু তা আমাদের ধ্যানযোগে চিন্ময় চৈতন্যে উর্ত্তীন্ন হতে সাহায্য করে। চিন্ময়কে সহজে ধরা যায় না। তাই তারই প্রাথমিক প্রস্তুতি হলো মূর্তি বা প্রতীক ধ্যান।
যাকে ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি সম্মান করি যার আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করি তার প্রতিকৃতি অবলম্বনও ধ্যানের সহায়ক। অনেকে নিজ নিজ গুরু মূর্তি বা মহাপুরুষের মূর্তি ধ্যান করেন। এখানে পরমেশ্বর, ইষ্ট, দেবতা ইত্যাদি এক মূর্তিতে সন্নিবিষ্ট।
প্রণব প্রতীক অবলম্বনে পরমেশ্বরের ধ্যান সুপ্রসিদ্ধ রীতি। প্রণব প্রতীক ধ্যানযোগে প্রাপ্ত। এই প্রতীকের সাহায্যে ধ্যান অতি সহজ হয়। প্রণব জ্যোতির্ময় প্রতীক। বহু সাধক প্রণব প্রতীক অবলম্বনে ধ্যান ও সাধনা আজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
অগ্নিকে সাক্ষাৎ দেবতা হিসেবে অনেকেই পূজা করেন। সম্মুখস্থ প্রজ্জ্বলিত অগ্নি শিখা দর্শন এবং তৎপরে নিজ মানসপটে তার ধ্যান, ধ্যানকে অতি সহজ ও অনায়াস করে। অগ্নি জ্যোতির্ময়, ধ্যানের ক্ষেত্রে একটি বিরাট অবলম্বন। অগ্নি ধ্যান আমাদের অন্তরলোককে জ্যোতির্ময় করে তোলে।
সূর্যকে অবলম্বন করে অনেকে ধ্যান করেন। সূর্য হল এমন এক প্রতীক যিনি সর্বাপেক্ষা অনায়াস দৃশ্য। সূর্য জ্যোতির্ময়। অগ্নি ধ্যানের থেকে সূর্যের ধ্যান আরো সহজ, সূর্য দর্শন অগ্নি সৃষ্টির থেকে অনেক সহজতর। তাছাড়া সূর্য অতি বিরাট ও বিশাল। যিনি অতি বৃহৎ, যার পরে বৃহৎ কিছু নেই,সেই পরমেশ্বরের ধারণা করতে বিরাট কিছুকেই অবলম্বন করা ভালো। সূর্য হলেন ধ্যানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবলম্বন।
অন্ধকারে অচঞ্চল প্রদীপ শিখা অবলম্বনে ধ্যান করা যায়। আমাদের ভিতরটা ঘন অন্ধকার। প্রতিনিয়ত প্রদীপ শিখার ধ্যান করতে করতে,আমাদের ভিতরের অন্ধকার কেটে গিয়ে ওই প্রদীপ শিখা ক্রমশ উজ্জ্বলতর হয়ে আমাদের অন্তরের সকল তমশা বিদীর্ণ করিয়া দেয়। ছোট্ট শিখা ক্রমশ বিরাট ব্রহ্মাণ্ডকে জ্যোতির্ময়, তেজময় ও আলোকময় করিয়া তোলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন