ধ্যান
ধ্যান কি?
পরম চৈতন্যকে নিজের ভিতর প্রত্যক্ষ করার যে প্রয়াস তার নামই হলো ধ্যান।
আমাদের ভিতরে তিনি সর্বদা আছেন। তাকে চিত্রপটে জাগিয় তোলার নামই ধ্যান। ধ্যানেতে বাইরে থেকে কিছু আসে না; ভিতরে নিগূঢ় হয়ে যিনি আছেন তারই বিকাশ ও প্রকাশের জন্য ধ্যান। ধ্যান প্রভাবে তিনি জাগ্রত ভাস্বর ও দীপ্তমান হয়ে ওঠেন। অঙ্গ বিস্মৃতির অন্তরালে আমরা ডুবে আছি।ধ্যান আমাদের সেই বিস্মৃতির গভীর তল থেকে উদ্ধার করে এবং আমাদের স্বরূপ কে প্রত্যক্ষ করতে সাহায্য করে।
সংস্কৃত 'ধ্যৈ' ধাতু থেকে ধ্যান শব্দটি এসেছে।'ধ্যৈ' ধাতুর অর্থ হলো 'চিন্তা করা'। একাগ্র চিন্তার নাম ধ্যান।নিয়মিত অভ্যাসে ধ্যান ক্রমশ গভীরতম মাধ্যম আশ্রয় করে পরিশেষে ঈশ্বরীয় নির্বিকল্প সমাধি তে পৌঁছায়।
ধ্যান করতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। ধ্যাতা-যিনি ধ্যান করেন; ধ্যেয়-যার ধ্যান করা হয়; ধ্যান-যে ক্রিয়াটি করা হয়।
ধ্যানযোগে যে যাত্রা শুরু হয়, সমাধিযোগে সেই যাত্রার পরিণতি। ধ্যান করতে হলে প্রথম প্রথম কোন কিছুকে ধরতেই হয়। মূর্তি, প্রতীক, অগ্নিশিখা, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদিকে অবলম্বন করে ধ্যান শুরু করা হয়। কিন্তু আমাদের অন্তিম লক্ষ্য হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর।
আত্মা কে শক্ত করে ধরবার জন্যই ধ্যান। আত্মা নিত্য বিদ্যমান-এই সত্যটিকে ধ্যানের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। ধ্যান আমাদের সামনে আধ্যাত্ম জগতের নব দিগন্ত উন্মোচিত করে। ধ্যান আধ্যাত্ম ক্ষেত্রের সহজ পথ।
ধ্যান মানে তনময় হওয়া;আমি চেষ্টা করছি আমার সমগ্র সত্তাকে পরমেশ্বরের নিমজ্জিত করতে।
জ্ঞানের গভীরতায় আমরা যাকে পাই তিনি হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর। যে আনন্দ, যে অনুভূতি, যে রসাস্বাদন আমরা ধ্যানের মধ্যে পাই তিনি হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর। তারই সেবা আমরা নিরন্তর ধ্যানযোগে করি। ধানের গভীরতম প্রদেশের তাকে আমরা একান্তে নিবিড়তম ভাবে পাই।
ধ্যান দৃষ্টি আমাদের জীবনকে দুই ভাবে সাহায্য করে। প্রথমত, যিনি আপাতভাবে নেই বলে মনে হয়, তাকে প্রত্যক্ষ করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয়ত, ধ্যান আমাদের মহাবেশ থেকে রক্ষা করে।
ধ্যান আমাদের দৃষ্টিতে শক্তি ও স্বচ্ছতা আনে,যার প্রভাবে বস্তুর স্বরূপ কে আমরা সহজে বুঝতে বা চিনতে পারি।
ধ্যান চুম্বকের মতো আমাদের দেহমনপ্রাণকে ধরে রাখে। কিছুতেই টানাটানি করে তাদের নিম্নভূমিতে নামানো যায় না। সেই রসে যখন আমরা মজে যাই, তখন আমাদের মৌমাছির অবস্থা হয় -মধুপানে বিভোর -বাহ্য জগতের জ্ঞান হারা।
দুধের গুণাগুণ আমরা বইতে পড়ে, লোকের মুখে ইত্যাদির মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু প্রত্যক্ষ হলো নিজে দুধ সেবন করে হৃষ্টপুষ্ট হওয়া। সেরকম ধ্যান বিদ্যা যতই চর্চা করা হোক না কেন, আসল হলো ধ্যানের মধ্য দিয়ে পরমাত্মাকে সাক্ষাৎ করা, অনুভব করা। এটাই হলো ধ্যান সাধনার লক্ষ্য। বই পড়ে বা শুনে ধ্যানের উপলব্ধি হয় না। এটা একান্ত ভাবে নিজে করে পাওয়ার বিষয়। যখন ইন্দ্রিয় এবং সংসার আমাদের মধ্যে চঞ্চলতা আনবে, তখনই ধ্যানের মধ্যে ডুবে যাওয়া হলো একমাত্র মহৌষধ।
বিক্ষেপের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে আমাদের মন-প্রাণের সর্বদা অবক্ষয় ঘটে। এই অবক্ষয়কে ধ্যান আমাদের পূরণ করে, আমাদের অমৃতলোকের যাত্রাকে সুগম করে। দেহের জন্য যেমন খাদ্য, বিশ্রাম ও নিদ্রার প্রয়োজন, মনের পুষ্টির জন্য তেমনি ধ্যানের প্রয়োজন। ধ্যান হলো মন প্রাণের সঞ্জীবনী সুধা।জীবনের পূর্ণতা ও সুস্থতার জন্য ধ্যান অপরিহার্য। ধ্যান হল অন্তরের চক্ষু দিয়ে দেখা। ধ্যান শক্তি হল বিদ্যুৎ শক্তির মতন। ধ্যানীর চিন্তা গুলি প্রচন্ড ও দুরন্ত গতিতে নিরন্তর একই লক্ষ্যে ছুটে চলেছে। ধ্যান হল এমন এক পদ্ধতি যার সাহায্যে জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মন সর্বদা বহির্মুখী।মনের শক্তি প্রবাহকে বহির্মুখী হতে না দিয়ে সংযত করে যদি কোন মহত্তর বিষয়ে স্থির করা হয় তবে তাকে ধ্যান বলা হবে। জলের যেমন নির্দিষ্ট আকার নেই, যে পাত্রে থাকে সেই পাত্রের আকার ধারন করে; শক্তির সেইরকম নির্দিষ্ট আকার নেই। শক্তি বর্ধিত হয় একাগ্রতা দ্বারা, যাকে ধ্যান বলে। বিক্ষিপ্ত চিন্তা রাশি যখন এক মুখে প্রবাহিত হয়, তখন সেই চিন্তা রাশি জমাট বেঁধে চেতনায় রূপান্তরিত হয়।
ধ্যানের লক্ষ্য হলো দুটি -(১) স্বরুপে লীন থাকা, (২) বিশ্বরূপে ছড়িয়ে পড়া। তবে এই বিশ্বরূপ দর্শন সীমিত ইন্দ্রিয়গোচর নয়, চেতনার বৃহৎ আকার অর্থাৎ সীমিত আমির অসীম আমিতে অধিষ্ঠান।
শক্তির মূল উৎস কে কেন্দ্র বলে। কেন্দ্র যদি মজবুত ও সচেতন না হয় তবে দেহ ও মনরাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ধ্যানের প্রথম লক্ষ্য হলো কেন্দ্রমুখী হওয়া বা নিজ উৎসে ফিরে যাওয়া। এই কেন্দ্র গুলিকে যোগশাস্ত্রে সপ্তচক্র ও বিজ্ঞানে সপ্ত গ্ল্যান্ড বলে।এই চক্র গুলি হতেই শক্তি উৎসারিত হয়ে শরীরের ও বাহিরের রাজ্যকে সক্রিয় করে তোলে। এই সাতটি চক্র হলো - সহস্রার চক্র, আজ্ঞা চক্র, বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র, মনিপুর চক্র, সাধিষ্ঠান চক্র ও মূলাধার চক্র।
মনের 6 টি স্তর আছে, যথা -মূঢ়, ক্ষিপ্ত, বিক্ষিপ্ত, একাগ্র, নিরুদ্ধ ও সাম্য। এই গুলি হল অন্তরের চেতনার বিভিন্ন স্তর।মন ধ্যানের প্রভাবে যতই একাগ্র হয় ততো সে ক্ষিপ্ত, বিক্ষিপ্ত অবস্থা ছাড়িয়ে ক্রমে ক্রমে শান্ত, স্থায়িত্ব ও নিত্য বোধে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মনে যে সুখী নয় সে কোনদিন বিষয়বস্তুতে সুখী হতে পারে না। তাই সুখ হল অন্তরের যাকে ধ্যানের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।
ধ্যান চুম্বকের মতো আমাদের দেহমনপ্রাণকে ধরে রাখে। কিছুতেই টানাটানি করে তাদের নিম্নভূমিতে নামানো যায় না। সেই রসে যখন আমরা মজে যাই, তখন আমাদের মৌমাছির অবস্থা হয় -মধুপানে বিভোর -বাহ্য জগতের জ্ঞান হারা।
দুধের গুণাগুণ আমরা বইতে পড়ে, লোকের মুখে ইত্যাদির মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু প্রত্যক্ষ হলো নিজে দুধ সেবন করে হৃষ্টপুষ্ট হওয়া। সেরকম ধ্যান বিদ্যা যতই চর্চা করা হোক না কেন, আসল হলো ধ্যানের মধ্য দিয়ে পরমাত্মাকে সাক্ষাৎ করা, অনুভব করা। এটাই হলো ধ্যান সাধনার লক্ষ্য। বই পড়ে বা শুনে ধ্যানের উপলব্ধি হয় না। এটা একান্ত ভাবে নিজে করে পাওয়ার বিষয়। যখন ইন্দ্রিয় এবং সংসার আমাদের মধ্যে চঞ্চলতা আনবে, তখনই ধ্যানের মধ্যে ডুবে যাওয়া হলো একমাত্র মহৌষধ।
বিক্ষেপের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে আমাদের মন-প্রাণের সর্বদা অবক্ষয় ঘটে। এই অবক্ষয়কে ধ্যান আমাদের পূরণ করে, আমাদের অমৃতলোকের যাত্রাকে সুগম করে। দেহের জন্য যেমন খাদ্য, বিশ্রাম ও নিদ্রার প্রয়োজন, মনের পুষ্টির জন্য তেমনি ধ্যানের প্রয়োজন। ধ্যান হলো মন প্রাণের সঞ্জীবনী সুধা।জীবনের পূর্ণতা ও সুস্থতার জন্য ধ্যান অপরিহার্য। ধ্যান হল অন্তরের চক্ষু দিয়ে দেখা। ধ্যান শক্তি হল বিদ্যুৎ শক্তির মতন। ধ্যানীর চিন্তা গুলি প্রচন্ড ও দুরন্ত গতিতে নিরন্তর একই লক্ষ্যে ছুটে চলেছে। ধ্যান হল এমন এক পদ্ধতি যার সাহায্যে জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মন সর্বদা বহির্মুখী।মনের শক্তি প্রবাহকে বহির্মুখী হতে না দিয়ে সংযত করে যদি কোন মহত্তর বিষয়ে স্থির করা হয় তবে তাকে ধ্যান বলা হবে। জলের যেমন নির্দিষ্ট আকার নেই, যে পাত্রে থাকে সেই পাত্রের আকার ধারন করে; শক্তির সেইরকম নির্দিষ্ট আকার নেই। শক্তি বর্ধিত হয় একাগ্রতা দ্বারা, যাকে ধ্যান বলে। বিক্ষিপ্ত চিন্তা রাশি যখন এক মুখে প্রবাহিত হয়, তখন সেই চিন্তা রাশি জমাট বেঁধে চেতনায় রূপান্তরিত হয়।
ধ্যানের লক্ষ্য হলো দুটি -(১) স্বরুপে লীন থাকা, (২) বিশ্বরূপে ছড়িয়ে পড়া। তবে এই বিশ্বরূপ দর্শন সীমিত ইন্দ্রিয়গোচর নয়, চেতনার বৃহৎ আকার অর্থাৎ সীমিত আমির অসীম আমিতে অধিষ্ঠান।
শক্তির মূল উৎস কে কেন্দ্র বলে। কেন্দ্র যদি মজবুত ও সচেতন না হয় তবে দেহ ও মনরাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ধ্যানের প্রথম লক্ষ্য হলো কেন্দ্রমুখী হওয়া বা নিজ উৎসে ফিরে যাওয়া। এই কেন্দ্র গুলিকে যোগশাস্ত্রে সপ্তচক্র ও বিজ্ঞানে সপ্ত গ্ল্যান্ড বলে।এই চক্র গুলি হতেই শক্তি উৎসারিত হয়ে শরীরের ও বাহিরের রাজ্যকে সক্রিয় করে তোলে। এই সাতটি চক্র হলো - সহস্রার চক্র, আজ্ঞা চক্র, বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র, মনিপুর চক্র, সাধিষ্ঠান চক্র ও মূলাধার চক্র।
মনের 6 টি স্তর আছে, যথা -মূঢ়, ক্ষিপ্ত, বিক্ষিপ্ত, একাগ্র, নিরুদ্ধ ও সাম্য। এই গুলি হল অন্তরের চেতনার বিভিন্ন স্তর।মন ধ্যানের প্রভাবে যতই একাগ্র হয় ততো সে ক্ষিপ্ত, বিক্ষিপ্ত অবস্থা ছাড়িয়ে ক্রমে ক্রমে শান্ত, স্থায়িত্ব ও নিত্য বোধে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মনে যে সুখী নয় সে কোনদিন বিষয়বস্তুতে সুখী হতে পারে না। তাই সুখ হল অন্তরের যাকে ধ্যানের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন